রমজান প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

শেষ নবীর উম্মত হিসেবে রমজান মাসের বিশেষ কিছু ফজিলত শুধু আমাদেরই দেওয়া হয়েছে; যা পূর্ববর্তী কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি। যেমন পানাহার না করার কারণে মুখ থেকে যে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় তা আল্লাহ তায়ালার কাছে মিশকে আম্বরের চেয়েও বেশি সুগন্ধিময়; ফেরেশতারা ইফতার পর্যন্ত রোজাদারের জন্য প্রার্থনা করতে থাকেন; শয়তানকে এ মাসে আবদ্ধ করে রাখা হয়; প্রতিদিন আল্লাহ তায়ালা জান্নাতকে নতুন করে সাজান ও রমজানে প্রত্যেক রাতের শেষে রোজাদারের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
অথচ রমজান মাসে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী প্রস্তুতি নিতে থাকে গণমানুষকে ঠকিয়ে বেশি লাভ করার। ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যের প্রশিক্ষণের মাস রমজানে নির্মমতার চর্চা করেন তারা। মজুদকরণ বা অপকৌশলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে ‘বড়লোক’ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হন। তাদের এই মনোভাবের কারণে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ না থাকলেও বাড়ে নিত্যপণ্যের দাম। চাল, ডাল, ছোলা, চিনি, ভোজ্য তেল, খেজুর ইত্যাদির দাম হয় গগণচুম্বী।

একজন মুসলমান ব্যবসায়ীর রমজানকেন্দ্রিক এমন প্রস্তুতি হতে পারে না। কারণ পণ্য মজুদ করে দাম বাড়ালে সেই ব্যবসায়ীর প্রতি আল্লাহ তায়ালা ক্ষুব্ধ হন এবং সম্পর্ক ছিন্ন করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্য মজুদ রাখল সে আল্লাহর কাছ থেকে নিঃসম্পর্ক হয়ে গেল, আল্লাহ নিঃসম্পর্ক হয়ে গেলেন তার থেকে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৮/৪৮১)

সাধারণ ভোক্তাদের জিম্মি করে ‘বিত্তশালী’ হয়ে গেলেও কোনো লাভ নেই। তার এ অবৈধ সম্পদ যেমন পরকালে জাহান্নামে প্রবেশের কারণ হবে, তেমনি দুনিয়ার জীবনেও তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। উপার্জন হারাম হওয়ার কারণে নামাজ, রোজা, হজ, দান-সদকা কিছুই কবুল হবে না। মজুদদারির মাধ্যমে কোটিপতি হলেও তার জন্য দারিদ্র্য অবধারিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম উপায়ে সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ : ২/৭২৯)

পক্ষান্তরে যারা মজুদদারি না করে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা করল, এ ব্যবসা পরিণত হবে ইবাদতে। তার উপার্জন আল্লাহ তায়ালা বরকতময় করে দেবেন। তাকে অপ্রত্যাশিত রিজিক প্রদান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘খাঁটি ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয় আর পণ্য মজুদদকারী অভিশপ্ত হয়।’ (ইবনে মাজাহ : ২/৭২৮)
দুনিয়ায় রিজিকে বরকত পাওয়ার পাশাপাশি হাশরের ময়দানেও পুরস্কৃত হবে। তাকে প্রদান করা হবে নবীদের সঙ্গী হওয়ার পরম সৌভাগ্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদের হাশরে নবীগণ, সিদ্দিকগণ ও শহীদগণের সঙ্গে হাশর হবে।’ (তিরমিজি : ৩/৫১৫)

তাই একজন ব্যবসায়ীর উচিত রমজানকেন্দ্রিক এমন একটি পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা, যেন তার ব্যবসা তাকে নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত থেকে বিরত রাখতে না পারে, আবার ব্যবসায় সব ধরনের হারামকে ‘না’ বলে আল্লাহর বান্দাদের জন্য সুলভমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহ করে ব্যবসাকেও যেন ইবাদতে পরিণত করতে পারে।